Search

Thursday, February 4, 2010

নড়াইল জেলার পটভূমি


বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও চিন্তাবিদদের  মধ্যে নড়াইলের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কিংবদন্তী আছে যে নড়িয়াল ফকিরের আর্শিবাদপুষ্ট নড়ি হতে নড়াইল নামের উৎপত্তি হয়েছে। নবাব আলিবর্দী খাঁ এর শাসনামলে তার এক কর্মচারী মদনগোপাল দত্ত নৌকা যোগে স্বপরিবারে  কিসমত কুড়িগ্রাম আসেন। এখানে তিনি কচুরীর ধাপের উপর ধ্যানরত অবসহায় একজন ফকিরকে দেখতে পান । তিনি নড়িয়াল ফকির। মদনগোপাল দত্ত নত হয়ে তার আর্শিবাদ কামনা করেন। ফকির প্রীত হয়ে তাকে তার হাতের নড়ি (লাঠি) উপহার দেন এবং ঐ এলাকা আবাদ করার নির্দেশ দেন (লাঠিকে সহানীয় ভাষায় নড়ি বলে অভিহিত করা হয়)। ফকিরের আর্শবাদ পুষ্ট হয়ে তিনি কুড়িগ্রামে বসতি সহাপন করেন এবং ধীরে ধীরে ঐ এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হয়। নড়িয়াল ফকিরের আর্শীবাদপুষ্ট তাই নাম হয় নড়িয়াল। পরবর্তীতে লোকমুখে বিকৃত হতে হতে নড়িয়াল থেকে নড়াইল  নামের  উৎপত্তি  হয়েছে।

গবেষক এস,এম রইস উদ্দীন  আহমদ  এর মতে লড়েআল  হতে নড়াইল  নামের  উৎপত্তি  হয়েছে। যারা শক্রর  বিরদ্ধে নড়াই  করে সহানীয় ভাষায়  তাদের লড়ে বলে । হযরত খান জাহান আলীর সময়ে  রাজ্যের  সীমান্তে  সীমান্ত  প্রহরী  নিয়োজিত  ছিল। নড়াইল  এলাকা  নদী নালা খাল বিল বেষ্টিত । খাল কেটে  রাজ্যের সীমান্তে  পরীখা  তৈরী করা হত। খাল বা পরীখার পাশে চওড়া উচু আইলের উপর দাড়িয়ে লড়ে বা রক্ষী সেনারা পাহারা দিত। এভাবে লড়েআল হতে লড়াল > নড়াইল নাম এর উৎপত্তি হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে ।

আরেকটি প্রচলিত মত হল নড়ানো থেকে নড়াইল  নামের  উৎপত্তি  হয়েছে। বাংলাদেশে  অনেক স্থানের নামের সাথে ইল প্রত্যয় যুক্ত আছে যেমন টাঙ্গাইল, ঘাটাইল, বাসাইল, নান্দাইল ইত্যাদি। প্রত্যোকটি সহানের নামকরণের ক্ষেত্রে  কিছু  কিংবদন্তী বা লোক  কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি বড়  পাথর সরানোকে কেন্দ্র করে  নড়াল বা নড়াইল  নামের  উৎপত্তি বলে কেউ কেউ  মনে করেন ।
১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা  প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল  শব্দটি  স্থানীয় লোকমুখে নড়াল  নামে উচ্চারিত হয়। ঐ  সময় নড়াইল  সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে  এই  মহাকুমা  গঠিত হয় । পরবর্তীতে আলফাডাঙ্গা থানা এবং অভয়নগর থানা এই মহাকুমা ভূক্ত হয়। ১৯৩৪ সালে প্রশাসনিক সীমানা  পূর্নগঠনের  সময় অভয়নগরের পেড়লী,  বিছালী ও শেখহাটি এই তিনটি  ইউনিয়নকে নড়াইল জেলা  ভূক্ত করে অবশিষ্ট অভয়নগর যশোর  জেলা  ভূক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্থান সৃষ্টির সময় এই মহাকুমায়  চারটি  থানা ছিল । 



১৯৬০ সালে আলফাডাঙ্গা থানা যশোর হতে  ফরিদপুর জেলা ভূক্ত হয় । ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ নড়াইল  মহাকুমাকে জেলায়  রুপান্তরিত করা হয় । প্রথম জেলা প্রশসাক  ছিলেন ম শাফায়াত আলী । ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ নড়াইল মহকুমার প্রশাসক জনাব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ, জনাব আব্দুল হাই এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় নড়াইল ট্রেজারীর তালা ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে যশোর সেনানিবাস আক্রমণের মধ্যে দিয়ে এ জেলার মানুষের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়। অগনিত মুক্তি যোদ্ধার রক্ত এবং অনেক অত্যাচারিত , লাঞ্চিত মা-বোনদের অশ্রু ও সংগ্রামের  ফলে ১৯৭১ সনের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল হানাদার মুক্ত হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে নড়াইল জেলার বিশেষ অবদান  রয়েছে। নড়াইল জেলা বাংলাদেশের  দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা  অধ্যুসিত জেলা। এ জেলা  হতে প্রায়  ২০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে  অংশ গ্রহণ করেছে।  দেশের  ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর একজন মরহুম  ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ  নড়াইলের কৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধকালীন  পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের  হাতে শাহাদাৎ  বরণকারীর  সংখ্যাও একেবারে  কম নয়। পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক চিত্রা নদীর পাড়ে লঞ্চঘাটের পল্টুনের উপর ২৮০০ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।